তবু অনন্ত জাগে

স্বাধীনতা দিবস (মার্চ ২০১৯)

বহতা নদী
  • ১৯৪
১.
ঘুম ভাঙতে আজ এতটা দেরি হওয়ায় ইলিয়াস আলীর মনটা ভারাক্রান্ত হয়। ফজরের ওয়াক্ত শেষ হতে খুব বেশি দেরি নাই। মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার সময় অতিক্রান্ত। নামাজটা ঘরেই সারতে হবে। শুক্রবারের প্রতি ওয়াক্তের নামাজ সচারচর মসজিদে পড়ে নেবার চেষ্টা থাকে ইলিয়াস আলীর। তুলনামূলক অধিকহারে জনসংযোগ ঘটে শুক্রবারের জুম্মার নামাজের সময়। ফজরে লোক কম হলেও মুরব্বীদের সাথে নিরিবিলি মোলাকাতের সুযোগটা থাকে। সেই সুযোগটা হাত ফস্কে যাওয়ায় আফসোসের তিতকুটে অনুভূতিতে ছেয়ে যায় ভেতরটা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নাই। এখন থেকে নির্বাচন পর্যন্ত, প্রতিটা দিন হিসাব করে খরচ করা চাই। যদিও জানা মতে,পাল্লা দেবার মতো যোগ্য প্রার্থী এখনও আশেপাশে নাই। তারপরও প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিজের চেয়ে কমজোর ভাবার বোকামিতে সে আর নাই। গেলো বারের নির্বাচনে এই গ্রামেরই ছেলে শহরবাসী হারিছ শেখ হুট করে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ভালোই শিক্ষা দিয়ে গেছে। প্রার্থী হিসেবে হারিছ শেখ তারচে’ শিক্ষিত, যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রথমদিকে হারিছকে ধর্তব্যেই নেয়নি। ভোটের দিন যত নিকটবর্তী হয়েছে, পাল্লা দিয়ে গ্রামবাসী হারিছ শেখের নানা গুণগানে মুখর হয়ে তার দিকেই ঝুঁকেছে। বাতাস বুঝে ব্যবস্হা নেয়ার ব্যাপারে স্হানীয় এমপি সবুর স্যারের সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল ভাগ্যিস! নইলে সে যাত্রা ভরাডুবি ঠেকানো সম্ভব হতো না ইলিয়াস আলীর পক্ষে। কোথায় থাকতো তার চেয়ারম্যানগিরি।

ইছাপুর কেন্দ্রিয় মসজিদে নামাজের আড়ালে যেটা সবচে’ বেশি চলে সেটা হলো পলিটিক্স। সোজা করে বললে ভিলেজ পলিটিক্স। সেসবের সঠিক সন্ধান পেতে হলে মৌচাকে সেঁটে থাকা মাছির মত মসজিদে নামাজের নামে সেঁটে থাকতে হয়। তাতে করে লাভ দুদিকেই। চারদিকের ভাও বাতাস বুঝে নেবার পাশাপাশি নিয়মিত মসজিদ যাতায়তে তার খোদাভক্তির নমুনাটিও গ্রামবাসীর মনে সযত্নে গেঁথে দেয়া যায়। মুসলিম বসতিপূর্ণ গ্রামে এটিকে বিশেষ গুণ হিসেবেই দেখার চল। রাজনীতির পালে এটা দুদ্দাড় হাওয়াও তোলে।

বিক্ষিপ্ত মনে, তড়িঘড়ি ওজু সেরে নামাজ শুরুর উদ্দেশ্যে ঘরের দোর খুলে বাইরে পা দেয়া মাত্রই নরম পিছলা কিছু একটায় আছাড় খেয়ে পড়ে যায়। তীব্র ঘিনঘিনে ভাব ছড়িয়ে পড়ে ইলিয়াস আলীর সারা শরীরে। মানুষ্যকৃত বর্জ্যের বিকট গা গুলানো গন্ধে তার নাড়িভূঁড়ি উল্টে আসতে চায়। স্হানকাল ভুলে কুৎসিত খিস্তি ছুটে ইলিয়াস আলীর মুখ থেকে। তার গালাগালির তোড়ে ঘুমন্ত কেউ কেউ ভোরের আরামদায়ক ঘুমের আমেজ ছেড়ে বাইরে এসে, কাণ্ড দেখে তাজ্জব বনে যায়। ঠিক ইলিয়াস আলীর ঘরের দোরের সামনে একতাল বর্জ্য থুবা হয়ে রয়েছে। জিনিসটার চেহারা এখনও বেশ টাটকা, শেষ রাতে করে যাওয়া কাণ্ড বলে মনে হচ্ছে।

ইলিয়াস আলী, ইছাপুর গ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান। মানুষ হিসেবে যথেষ্ট মন্দ হওয়া সত্ত্বেও, একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় তার বিশেষ দাপট আছে। তার প্রতি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ প্রকাশ্যে যেটা প্রদর্শন করে সেটাকে কোন মতেই সমীহ বলা চলে না। ভয়ে তার প্রকাশ ঘটে না এই যা। যার ভয়ে বেশির ভাগই সিঁটকে থাকে, সেরকম একজনের বাড়িতে চোরের হানা, এবং সুবিধা করতে না পেরে বেছে বেছে, ঠিক ইলিয়াস আলীর ঘরের দোরে এমন দুঃসাহসিক কাজ করার হিম্মত গ্রামের কে দেখাতে পারে? বিষয়টা নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয় সদ্য ঘুম ভাঙাদের জটলা ঘিরে।

ইলিয়াস আলীর বিগড়ে যাওয়া মেজাজে বর্জ্যের ঘটনাটি বারুদের মুখে আগুন দেয় বুঝি। কোন বান্দির পুত কাজডা করলো, তার সন্ধানে মজিদকে তলবে লোক পাঠানো হয়। মজিদ এসব খবর জোগাড়ে ওস্তাদ। বর্জ্যত্যাগকারীর উদ্দেশ্যে কঠিনতম এবং অশ্লীলতম যাবতীয় গালাগালি প্রয়োগ করে, ইলিয়াস আলী গোসলের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। দৃশ্যপট থেকে ইলিয়াস আলীর সরে যাওয়া মাত্র, পোষ্যদের দু' একজন আরেকটু ঘুমিয়ে নেবার তাগিদে সটকে পড়ে।

ইলিয়াস আলীর দ্বিতীয় পক্ষের বউ জরিনা বিছানা ছেড়ে না নড়লেও সে সজাগই আছে। আগ বাড়িয়ে কোন ঘটনা জানার বিষয়ে তার তেমন কৌতূহল নাই। ঘটনাস্হলে সে না গেলেও, ঘটনার খবর তার কাছে ঠিক পৌঁছে যাবে। বাইরের হৈ হট্টগোলে আপাতত আর ঘুম হবে না ভেবে, মেজাজটা খিঁচড়ে যায় জরিনার। অথচ এসময়ের ঘুমটাই সবচে' আরামদায়ক। নামাজ কাজা করা ইলিয়াস আলীর নাপছন্দ। কোন রকমে জায়নামাজে কপাল ঠুকে, প্রতি ভোরে জরিনা আবার ঘুমিয়ে নেয় একচোট।

ফরজ গোসল ছাড়াই জরিনার নামাজ পড়া নিয়ে ইলিয়াস আলীর প্রথম পক্ষের বউ রাহেলা পয়লা পয়লা খ্যাচম্যাচ করতো। সাত সকালে গোসল তার জন্য ফরজ হলে, সেই হিসাব থেকে ইলিয়াস আলী কেম্নে বাদ যায়? এমন মোক্ষম প্রশ্নে, জরিনাকে বিপাকে ফেলতে গিয়ে নিজেরই ফাঁদে পড়ার সমূহ সম্ভাবনায় জরিনার উদ্দেশ্যে, 'ময়মনসিঙ্গা বেশরম বেডি' বলে মুখে কুলুপ আঁটে রাহেলা। ইলিয়াস আলীর দ্বিতীয় বিয়ে সবে তিন মাসে গড়িয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই নয়া বউয়ের প্রতি স্বামীর পিরিত এখন জলন্ত চুলায় বলক দেয়া হাড়ির ভাতের মত। এখন স্বামীর কানে নয়া বউয়ের নামে কিছু তুলতে যাওয়া মানে সেধে বিপদকে কোলে তুলে নেয়া। পুরুষ মাইনষ্যের, বিশেষত তার স্বামী ইলিয়াস আলীর স্বভাব রাহেলার অজানা না। নয়া জিনিসের কদর তার কাছে তত দিন, চটক যতদিন। করুক রঙ্গ তামাশা। উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় রাহেলা সতীনের প্রতি ক্রমশ জমতে থাকা ঈর্ষা মিশ্রিত বিরক্তিকে আপাতত মাথা তুলতে না দিয়ে কপ্ করে গিলে নিয়েছে।

শোয়া থেকে ওঠে বসে জরিনা। নতুন গুড়ের ধোঁয়া ওঠা এককাপ চা, সাথে মচমচে একবাটি মুড়ির জন্য তার ভেতরে হঠাৎ আইঢাই শুরু হয়। কিন্তু মনার মায়ের টিকিরও দেখা নাই। ‘ধাউড় বেডি মনার মায় কিতা করে! ঘুমায়নি অখনও?’


২.

ইছাপুরের বুকের উপর দিয়ে সোজা একটা রাস্তা গিয়ে মহা সড়কে মিশেছে। সংস্কারের অভাবে রাস্তার ছাল চামড়া ক্ষয়ে গেছে। জায়গায় জায়গায় গর্ত হয়ে যান-বাহন চলাচলও প্রায় অকেজো হবার মুখে। গ্রামবাসী বহুবার বলা সত্ত্বেও এতদিন ইলিয়াস আলী তেমন পাত্তা দেয়নি। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাস্তা মেরামতের পরিকল্পনায় তৎপর হয় ইলিয়াস আলী। গ্রামবাসী অবগত হয়, শিঘ্রই রাস্তা বিষয়ে তাদের দুঃখের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। করিৎকর্মা চেয়ারম্যান দৌঁড় ঝাপ করে দ্রুত রাস্তা মেরামতের জন্য ইট, বালু, সিমেন্ট বরাদ্দের সরকারী ফরমান আনতে সক্ষম হয়। দুর্ভোগের দিন শেষ হতে যাচ্ছে, সে ভরসায় ইছাপুরবাসী যে যার দৈনন্দিন কাজে ডুবে যায়। কার্যক্ষেত্রে দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও রাস্তার হাল যে কার সেই থেকে যায়। বরং ইলিয়াস আলীর বাড়ির লাগোয়া খালি জায়গা জুড়ে একটা নতুন ঘর ওঠতে দেখা যায়। বিষয়টা নিয়ে কিসলুর চায়ের দোকানে জটলায় কানাঘুষা চললেও, মুখ ফুটে রাস্তা মেরামত বিষয়ে চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করার হিম্মত হয় না কারও।

বাষট্টি বছরের মজবুত শরীরের মতিন গাজী বরাবরই স্পষ্ট বক্তা। সময় মত সত্যিটা বলবার অপরাধে প্রায় তাকে নানা হেনস্তার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। মতিন গাজী সেসব খুব একটা গ্রাহ্য করে না। অন্যায় দেখে চুপচাপ থাকা তার পক্ষে ভয়ানক কষ্টের সামিল। এ তার অর্ন্তগত স্বভাব, চাইলেও নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারে না। সেই যুদ্ধের বছরও যেমন পারেনি। আজও পারে না।

যুদ্ধের সময় চোদ্দ বছরের কিশোর মতিন তার অসীম সাহসের কারণে খুব অল্প সময়ে স্হানীয় মুক্তিবাহিনি কমাণ্ডারের প্রিয়ভাজনে পরিণত হয়েছিল। পাকিবাহিনির গোপন খবরাখবর সংগ্রহে সাহসী মতিন ছদ্মবেশে হানা দিতো যমদূতদের আস্তানায়। তার মত বাচ্চা একটা ছেলেকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে না চাইলেও স্হানীয় এলাকা মতিনের নখদর্পণে থাকায়, আর তার একরোখা স্বভাবের কাছে কমাণ্ডারকে হার মানতে হতো। শত্রুশিবিরে যাওয়ার আগে প্রতিবারই মতিন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে অন্তিম বিদায় নিয়ে যেত। কিন্তু প্রতিবারই সে ঠিক ফিরে আসতো। সাথে নিয়ে আসতো পাকিবাহিনির পরবর্তী আক্রমণ বা শিবিরের নানা খবর। কমাণ্ডার ভালোবেসে তার নাম দিয়েছিলেন গাজী। সেই থেকে সে মতিন গাজী।

ইছাপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের পরিবারের বেঈমানির ইতিহাস সম্পর্কে মতিন গাজী যথেষ্ট অবগত। চেয়ারম্যানের চক্ষুশূল হবার সেটাও একটা কারণ বিশেষ। ইলিয়াস আলীর যোগসাজশ আর রটনায় স্হানীয় অনেকেই বিশ্বাস করে বিপত্নীক, সন্তানহীন, মতিন গাজীর তার ছেঁড়া। প্রায়ই আলাপ প্রসঙ্গে, বয়োবৃদ্ধ কিংবা ছাওয়াল-পাওয়ালগের যুদ্ধ দিনের কাহিনি বলার ঝোঁক চাপে মতিন গাজীর। স্বভাবতই, কথা প্রসঙ্গে গ্রামের প্রভাবশালী রাজাকারের নাম হিসেবে ইলিয়াস আলী ও তার পরিবারের কথাও ওঠে, তখন অবিশ্বাসে অনেকেই বিষয়টা হেসে উড়িয়ে দেয়। বিষয়টা নিয়ে যুবক শ্রেণীই সাধারণত হাসি ঠাট্টা করে। বৃদ্ধদের বেশির ভাগেরই বিষয়টা জানা, তারা ভয়ে মুখ খোলেনা। কেউ বলতে সাহস পায় না, ইলিয়াস আলীর একমাত্র চাচা কিংবা বড় ভাই, ইছাপুর শান্তি কমিটির দালাল ছিল। যাদের মৃত্যু যুদ্ধে না, মুক্তিবাহিনির হাতে হয়েছিল। তার যুদ্ধ দিনের কাহিনি, শ্রোতাদের কাছে নিছক গল্প হিসেবে উপভোগ্য হলেও, ইলিয়াস আলীর বিপক্ষে সে কাহিনি তেমন পাত্তা পায় না। চেয়ারম্যান বিষয়ে মতিন গাজীর নিরন্তর খোঁচাখাঁচিকে গ্রামের মানুষ পাগলের প্রলাপ ভেবে নেয়। তাদের এমন ভাবনা মতিন গাজীর জন্য শাপে বর হয়ে ইলিয়াস আলীর বিষাক্ত ছোবল থেকে তাকে রক্ষা করে। মতিন গাজী ছিটগ্রস্ত, এ কথা এখন ইছাপুর হাটের বুড়ো অশথ গাছটারও বুঝি জানা। যুদ্ধ দিনের অকুতোভয় মতিন গাজী এখন মস্তিষ্ক বিগড়ে যাওয়া হিসেবে গ্রামে পরিচিত, আর রাজাকার ইলিয়াস আলী বিশিষ্ট সমাজসেবক, নেতা।

৩.
গ্রামীণ জীবন যেন বন্ধ জলাশয়, মুক্ত নদীর মত দু’কূল ছাপিয়ে সীমাহীন দিগন্তে ছুটে যাবার তৃষ্ণা থাকে না স্হির জলে। বাতাসের তরঙ্গ কখনও কখনও সে জলে মৃদু আলোড়ন তোলে হয়ত, তারপর আবার আগের নির্জনতায় থির হয়। গ্রামের অধিকাংশ মানুষের গালগল্পের সুতোও সে নিয়মে গড়ায়। দেশ, রাজনীতি, নিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষের অত মাথা ব্যথা নাই। তাদের দৈনন্দিন আলাপে পেটের চিন্তা, রুজি রোজগার, অন্যের হাঁড়ির খবরাখবরই ঘোরাফেরা করে। কিসলুর দোকানের জটলায় নিত্যকার নানা আলাপ-সালাপের আবর্তে ফিসফিসিয়ে একবার করে চেয়ারম্যানের নতুন ঘর ওঠানোর বিষয়টা ওঠে আসে। প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের অতীত নানা অন্যায় চুপচাপ সয়ে যাবার মত, বর্তমান বিষয়েও বুক চিতিয়ে কৈফিয়ৎ চাওয়ার সাহস যুগিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না কারো পক্ষে। হারিছ শেখের মত বেঘোরে কেউ প্রাণ দিতে নারাজ।

মতিন গাজী নিজে যে কোন বিষয়ে চেয়ারম্যানের মুখোমুখি হবার সাহস রাখে। কিন্তু তাকে পাগল অভিযুক্ত করে বরাবরের মত এবারও তার কথার বেইল দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত। অতীতে বহুবার কাবিখার(কাজের বিনিময়ে খাদ্য) গম, বয়স্ক-বিধবা ভাতা, ভিজি এফ কার্ডের চাল, ইত্যাদি লোপাট হওয়া নিয়ে বলতে গিয়ে সেরকমই ঘটেছে। যদিও হারিছ শেখ হত্যাকাণ্ডের চাক্ষুস সাক্ষী হওয়া সত্ত্বেও হাতে উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় মুখ খোলা নিরাপদ ভাবেনি। ভাগ্যিস তখন সে মুখ খোলেনি! কামরান শেখ গোপনে গ্রামে এসে ভাইয়ের হত্যাকাণ্ড নিয়ে খোঁজখবর না করলে উক্ত ঘটনায় মতিন গাজীর প্রত্যক্ষ সম্পর্কের বিষয়টা গোপনই থেকে যেত। কামরান শেখ বহুদিন ধরে চেয়ারম্যানের বিপক্ষে গোপনে প্রমাণ সংগ্রহে নিয়োজিত। কাকপক্ষীতেও যেন টের না পায় সেরকম সাবধানতা বজায় রেখেছে সে একাজে। হারিছ শেখ হত্যার বিচারে সাধ্যমত সাহায্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মতিন গাজী।


এখন গ্রামের ভাঙা রাস্তা মেরামতির বিষয়ে হেস্তনেস্ত না করলেই না। তার পক্ষে ভ্যান নিয়ে ভাঙা রাস্তায় নিয়মিত চলাচল কম কষ্টের না। বিষয়টার আশু মীমাংসার জন্য গ্রামের কিছু মানুষ তার সাথে গেলে চেয়ারম্যান হয়ত গুরুত্ব দেবে। গ্রামের মানুষগুলোকে এই কথাগুলো বুঝিয়ে দলভারী করতে মতিনের কাল ঘাম ছুটে যায় প্রায়। পাগলের কথায় নাচা ঠিক হবে না, এমন মতামত দিয়ে মুরুব্বিদের বেশির ভাগই গা বাঁচিয়ে সরে থাকে। কতিপয় ভ্যাদাইমা আর তার মত কিছু ভূক্তভোগী নিজেদের গরজে আসছে বিষ্যুদবার মতিনের নেতৃত্বে ইউনিয়ন অফিসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

৪.

নিদির্ষ্ট দিনে সদলবলে মতিন গাজী যখন চেয়ারম্যানের অফিসে উপস্হিত হয়, ইলিয়াস আলী তখন ইছাপুর থানার এসআই কুদ্দুসের সাথে টেলিফোনে ব্যক্তিগত আলাপে মগ্ন ছিল। দীর্ঘক্ষণ তাদের অপেক্ষায় রেখে, সে আলাপ চলে। এক পর্যায়ে সহকারি ছেলেটি এসে অধৈর্য্য মতিন গাজীর সাক্ষাত লাভের অনুরোধটি ইলিয়াস আলীর কাছে পৌঁছে দিয়ে যায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনালাপ মূলতবি রেখে, আগতদের ডেকে নিতে হয়। গ্রামবাসীদের মাঝে মতিন গাজীকে দেখে চেয়ারম্যানের ভেতর খুঁতখুঁতানি শুরু হয়।

-কিরে মতিন খবর কী? ভালা আছস? মাতার অবস্হা কী তোর? আহা রে তোর জন্য মায়া লাগে খুব। কোন সাহায্য লাগলে কইতে সংকোচ করিছ না। তা কী কামে দলবল নিয়া হাজির হইছস?
-মাতা ঠিক আছে চেয়ারম্যান সাব। আসছি অন্য সমিস্যা নিয়া। আমাগো রাস্তার কী গতি হইবো? পাড়ার মাইনষ্যের মাজামুজা তো সব চুরচুর হয়া গেছে ভ্যানগাড়ির ঝাকাঝাকিতে। এই রাস্তা নিয়া আর কতদিন টালবাহানা চলবো? সরকার তো রাস্তার জন্য বরাদ্দ দিছে বহুদিন হইল। এহনও রাস্তা ঠিক হয় না ক্যান?

-আহা রে মইত্যা। তোর মগজের সমিস্যা এহনো আছে দেহি। সরকার তো বরাদ্দ দিয়াই খালাস। সেই বরাদ্দ রাস্তায় টাইন্যা আনতে কত কাহিনি, কত জায়গায় দানাপানি দিতে হয়, তার খবর কিসু জানছ তুই?
-তা আমার জানার দরকার নাই। কিন্তু আমি জানছি যে রাস্তার বরাদ্দ দিয়া আমাগো চেয়ারম্যানের ঘর উডতাছে। সেইডার জবাব কী?
-রাস্তার বরাদ্দ দিয়া চেয়ারম্যানের ঘর উডবো কেন? চেয়ারম্যান তো চেয়ারম্যানের টেকা দিয়ে ঘর তুলতাছে
-চেয়ারম্যানসাব আমার মাথা নষ্ট হইলেও চোখের মাথা খাই নাই অখনও। আমি নিজের চোখে দেখতাছি রাস্তার জন্য বরাদ্দ ইট, বালি, সিমেন্ট, রড, চেয়ারম্যানের উডানে জমা হইছে।
-ওরে পাগল কয় কী? রড, সিমেন্ট, কত মূল্যবান জিনিস তুই পাগলে বুঝবি কিছু? ওগুলা উডানে আনছি নিরাপত্তার জন্য। চুরিধারি বন্ধ করার জন্য।
-তা ভাল করছেন, কিন্তু সেই ইট সিমেন্ট রাস্তা বাদ দিয়া আপনের দালানে উডে ক্যান?
-হেহেহে এইটা যদি তুই বুঝতি, তাইলে তুই হইতি চেয়ারম্যান, আমি হইতাম মইত্যা পাগল।

তারপর ধূর্ত ইলিয়াস আলী উপস্হিত মুখগুলোর দিকে সর্তক চোখ বুলিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে মুখ খুলে,
-ওই মিয়ারা, নয়া ঘর যে উডে ওইডা কাগো জন্য জানো তো না। নাকি জানো?

পরস্পর মুখ চাওয়া চাওয়া করে কিছু মাথা ‘না’ বোধক ভঙ্গিতে হেলতে দেখা যায়। তখন চেয়ারম্যান আবার শুরু করে,
- তাইলে হুদাই পাগলে চেতছে দেইখ্যা তোমরাও তার সাথে নাচবা এইডা কী ঠিক, কও মিয়ারা?

আবার ‘না’ বোধকের মৃদু ঢেউ ওঠে ইউনিয়ন অফিসের ভেতর।
-শোনো মিয়ারা। বাড়ির সামনের ওই নয়া ঘর খান তোমাগো জন্য বানাইছি। ওইডা হইল তোমার নালিশ সালিশের জন্য। ঘরডা হয়া গেলে তোমাগো আর এতডা পথ হাঁইট্যা আসন লাগবো না বুঝচ্ছো? তোমাগো ভালোডা ভাইব্যাই না ঘরখান তুলছি। এহন কও কাজডা কইরা আমি কী অপরাধ করছি?

সমবেত জনগণ এ প্রশ্নের যুতসই উত্তর খুঁজে না পেয়ে, অপরাধী ভঙ্গিতে কার্পেটের নকশায় চোখ আটকে রাখে। ওষুধে কাজ দিয়েছে, বুঝে নিতে দেরি হয় না ইলিয়াস আলীর।

এস আই কুদ্দুসের ধারণা যদি সত্য হয় তবে বড় ভাবনার কথা। মতিন গাজী আর তার দলবলকে এখন কোন ভাবে কাটিয়ে দেয়া প্রয়োজন। তার মাথায় পুরান চিন্তার নতুন পোকা কূটকূট শুরু করে দিয়েছে। হারিছ শেখের ছোট ভাই বার দুয়েক ইছাপুরে কেন ঘুরে গেছে, সেটা জানা জরুরী। প্রমাণের অভাবে হারিছ হত্যাকাণ্ডের দায়ে কোন ভাবেই ইলিয়াস আলীকে অভিযুক্ত করতে ব্যর্থ হারিছ পরিবার, লাশ নিয়ে সেই যে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছে, আর এমুখো হয়নি কেউ। হঠাৎ করে এতদিন পর, তার ছোট ভাইয়ের আনাগোনা বেড়ে যাওয়াটা কিসের আলামত! নতুন করে, ধামাচাপা দেয়া কেসটা খুঁচিয়ে তোলার ফন্দিফিকির নয় তো? সামনে নির্বাচন, এখন সর্তক হাতে চাল চালতে হবে। ভাড়াটে খুনী ইদ্রিসের মুখ বন্ধ রাখতে এখনও তাকে মোটা অংকের টাকা গুণে যেতে হচ্ছে। খুনটার পেছনে কার হাত ছিল সেটা প্রকাশ পেলে সর্বনাশ হতে কতক্ষণ! এইগুলান সব বেঈমানের জাত। বেশি টাকার লোভে যদি মুখ খুলে ইদ্রিস? গফুরগঞ্জ থেকে তাকে সরে পড়তে বললে কেমন হয়? কিংবা যদি ইদ্রিসকেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া যায়? কথায় বলে শত্রুর শেষ রাখতে নাই। এক হিসাবে ইদ্রিস তার জন্য এখন সমস্যাই বটে। ঠাণ্ডা মাথায় বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে। আপাতত হারিছের চিন্তা সরিয়ে রেখে, উটকো আপদগুলোর দিকে মন দেয় ইলিয়াস আলী।

- মাতা ঠাণ্ডা রাহিছ মইত্যা। এই বয়সে এরাম আতকা মাথা গরম ঠিক না। নাহ্, এইবার তোরে শহরে নিয়া গিয়া বড় ডাক্তার দেহানো লাগত। খাড়া ইলেকশনটা জিইত্যা লই। তারপর ব্যবস্হা নিমু। কী কও মিয়ারা?

ইউনিয়ন অফিসে উপস্হিত সবগুলো মাথা সজোরে হ্যাঁ বাচক সম্মতিতে হেলে পড়ে।

৫.

চট করে ফুরিয়ে যাওয়া শেষ বিকেলের মায়ালু আলো পেছনে রেখে, সন্ধ্যা নামার আগে আগে কিসলুর দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায় সকলে। বয়স্কদের মধ্যে যারা সঙ্গে যাওয়া থেকে বিরত ছিল, অথচ কৌতূহলও চেপে রাখা দায়, এমন কেউ কেউ কিসলুর দোকানে তখনও তাদের ফিরবার অপেক্ষাতেই বসে ছিল। চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাত পর্বের ফলাফল প্রসঙ্গে মতিনের সঙ্গীদের অনেকেই এক সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা উগলে দেবার প্রতিযোগিতায় নামে। খানিক দূরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে খুচরো পয়সার ঝনঝনানির মত তাদের আলাপের গড়িয়ে পড়া শোনে মতিন গাজী। কে বলবে, ইউনিয়ন অফিসে গিয়ে এই মুখগুলোতে তালা পড়েছিল!

এক সাথে যেমন সবাই সরব হয়েছিল, এক সাথেই আবার তারা নীরব হয়ে যায়। তারপর বাড়ি ফেরার মুখে, নির্বাচনের পর মতিনের সুচিকিৎসার ব্যবস্হা হবে, এমন বদ্ধমূল ধারণার জিকির তুলে গ্রামবাসী যে যার ঘরের দিকে হাঁটা দেয়। ওদের হাঁটতে থাকা শরীরগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মতিন গাজীর মনে হয়, কতগুলো মৃতদেহ হেঁটে যাচ্ছে। মানুষগুলো যে বেঁচেও মরে আছে, তাদের এই বোধহীন পরাধীনতা মতিন গাজীকে ব্যথিত করে তোলে। ধীর পায়ে এগিয়ে আসা সন্ধ্যার নরম অন্ধকার গায়ে মেখে মতিন গাজী দোকানের বেঞ্চে বসে। কোমরের গামছায় মুখটা মুছে, এককাপ চা দিতে বলে। কিসলু কৌতূহলী হলেও চেয়ারম্যানের সাথে তাদের সাক্ষাত কেমন হলো সেসব যেচে তার কাছে জানতে চায়না। মতিন গাজী চায়ে চুমুক দিতে দিতে স্বভাবসুলভ ধীরস্হির গলায় সংক্ষেপে ঘটনা জানায়। তারপর কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে, তখনও দোকানে থেকে যাওয়া গুটিকয়েক উপস্হিত মানুষকে অবাক করে দিয়ে, আকাশ কাঁপিয়ে কেন জানি হেসে ওঠে। কিসলুসহ বাকিরা ওর হাসির কার্যকারণ বুঝে ওঠতে স্বাভাবিকভাবেই ব্যর্থ হয়ে ভাবে, পাগলের কারবার!

৬.
মতিন গাজী ইতিমধ্যেই আজকে রাতের পরিকল্পনাটা ছকে নিয়েছে। বাড়ি গিয়েই চ্যাপা শুঁটকি পুড়িয়া তেল, পিঁয়াজ, আর বেশি করে শুকনা মরিচ সহযোগে ভর্তা বানিয়ে গরম ভাত খাবে ঠেসে। চ্যাপা শুঁটকি খেলে পেট ঝেড়ে হাগা হয় তার। গন্ধে নিজেরই গা গুলায়। মানস পটে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ভেবেই হঠাৎ ওরকম হেসে ওঠেছিল। হাসির রেখা ঠোঁটে রেখেই, মনে মনে ভাবে,

-হারামি চেয়ারম্যানের মুখে হাগতে পারলে কামের কাম হইত। সেইডা যখন পারুম না, ওরে এই চেইত্যা পাগলের গু মাখাইয়াই ছাড়ুম। আর সেইডা শুক্রবার ফজরের ওয়াক্তেই। গু মাখ্ বেজন্মার বাচ্চা!

তারপর বেশ কিছুদিনের জন্য সে উড়াল দেবে ইছাপুর ছেড়ে। গফুরগঞ্জের ভাড়াটে খুনী ইদ্রিস এখন গোয়েন্দা পুলিশের ডেপুটি কমিশনারের জিম্মায়। সম্পর্কে যিনি কামরান শেখের ভায়রা। তার কারণেই হারিছ শেখের ধাপাচাপা দেয়া কেসটা নতুন করে চাঙ্গা করা হচ্ছে। ক্ষমতাশালী কেউ না থাকলে সুবিচার পাওয়া ভাগ্যেরই ব্যাপার। পাঁচ বছর আগের সময়টা ইলিয়াস আলীর অনুকূলে ছিল। এখন সেটা কামরান শেখের অনুকূলে এসে গেছে।

মতিন গাজীর কাজ হবে কামরান শেখের কথা মত নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে ইদ্রিসকে সনাক্ত করা। ইদ্রিসকে সনাক্তের পর আইনী ব্যবস্হা শুরু হবে। মামলা মিটে না যাওয়া পর্যন্ত মতিন গাজী ঢাকাতেই থাকবে এমন ব্যবস্হা পাকা হয়ে আছে। এই মামলার একমাত্র চাক্ষুস সাক্ষী মতিন গাজী। তার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই অভিজ্ঞদের পরামর্শ মত এমন ব্যবস্হা।

এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। স্বাধীনতার এতটা বছর পর ইছাপুরের মত অনেক গ্রাম আজও স্বাধীনতার আনন্দে ঝলমলিয়ে হেসে ওঠতে পারেনি। ইলিয়াস আলীদের মত নষ্ট মানুষের থাবার নীচে স্বাধীন দেশের পরাধীন মানুষগুলো মরে মরেই বেঁচে থাকে। তাদের কষ্ট চোখ মেলে না দেখলে চট করে বুঝে নেয়া যায় না। মরবার আগে অন্তত একটা নষ্ট কীট ইলিয়াস আলীর ধ্বংস নিজে চোখে দেখে যেতে চায় মতিন গাজী। স্বাধীনতার মানে মরে বেঁচে থাকা হতে পারে না। ইছাপুরের মানুষগুলো তাদের ভয়ের খোলস ভেঙে জেগে ওঠছে, কল্পনায় দৃশ্যটা ভেবে সুখের ব্যথায় মতিন গাজীর ভেতরটা কেমন উথলে ওঠে।

***
পরিকল্পনা মতো কর্মটি সেরে আসতে পেরে নিজের ভেতর খলবলে ছেলেমানুষি আনন্দ টের পায় মতিন গাজী। চেয়ারম্যান বাড়ির কেউ জেগে ওঠবার আগেই সরে আসে ত্রিসীমানা থেকে। প্রাচীন বট গাছটাকে ডানে রেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা পুকুরটা যেন মতিন গাজীকে হাতছানি দিয়ে ডাক দেয়। শরীরের অশুচি কাটাতে সে পুকুরের পাড়ে এসে দাঁড়ায়। পুকুরের আশপাশ জুড়ে গুটিকয়েক হেলেঞ্চা, কলমি শাকের সাথে মিলেমিশে থাকা সবুজ আগাছার ফাঁক ফোকর ভেদ করে বেরিয়ে আসা জংলা ফুলেরা, বুকে জমে থাকা শিশির ঝরিয়ে, চোখ তুলে দেখে নেয় দিনের প্রথম আগন্তুকটিকে।

দিনের প্রথম আলোর দিকে চোখ মেলে মতিন গাজীর মনে পড়ে গেল আজ ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস। মতিন গাজীর রোমকূপগুলো যেন একটু শিরদাড়া সোজা করে দাঁড়ালো। বুক ভরে ভোরের তেজহীন, নরম বাতাস টেনে নিয়ে, সন্তর্পণে পানিতে নামে মতিন গাজী। পুকুরের পানিও এখন বড় শান্ত কোমল। দিন বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে দুটোই দ্রুত মেজাজের কোমলতা হারাবে। মতিনের পক্ষে যতটা সম্ভব পানির শান্ত ভঙ্গির আড় না ভেঙে, বার কয়েক ডুব দিয়ে ওঠে পড়ে। ধীর পায়ে পাড়ে ওঠার সময় পরনের ভেজা লুঙ্গি-গেঞ্জি গায়ে সেঁটে যায়, ভোরের বাতাসের মৃদু অথচ তীব্র চুম্বন তার গোটা শরীরে কাঁটা ফোটায়। এখন তার কাজ, দ্রুত বাড়িতে পৌঁছানো। ফিরে গিয়ে শুকনা কাপড় গায়ে দিয়ে, রাতে ভিজিয়ে রাখা পান্তাটুকু খেয়েই বেরিয়ে পড়তে হবে। সকাল সকাল রওনা না হতে পারলে গন্তব্যে পৌঁছাতে রাত হয়ে যাবার সম্ভাবনা। ভাবনা মত পা বাড়ায় মতিন গাজী। শীতের কাঁপুনি থেকে বাঁচতে আর দ্রুত বাড়ি পৌঁছানোর তাগিদে বয়স ভুলে প্রায় খরগোশ পায়ে ছুটতে চায় মতিন গাজী। যে মানুষকে ডেকেও সাত সকালে ঘুম থেকে তোলা যায় না, সেই মানুষকে এত ভোরে গোসল করে ফিরতে দেখলে যে কারো সন্দেহ জাগতে পারে। এখন সে কারো চোখেই পড়তে চায় না। বাঁক নিয়ে সোজা না গিয়ে মতিন গাজী ঘুর পথ ধরে।

ছুটন্ত অবস্হায় তার মনে হয় চেয়ারম্যান বাড়ির চিল্লাপাল্লা একবার নিজ চোখে দেখে আসলে হতো। ইলিয়াস আলীর মুখটা মনে পড়তেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায় মতিন গাজীর।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোখলেছুর রহমান ভাষা ও বুনন চমৎকার!
হুমায়ূন কবির ভালোলাগা সহ শুভেচ্ছা, সাথে ভোট রইল ।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্পের ভিতরে চমতকার কিছু ইঙ্গিত ছিল, যা বেশ ভালো লেগেছে। তবে গল্পের মূল কাহিনীর চেয়ে বর্ণনা বেশি, যেখান থেকে রেষ নেওয়াটা খুব সময় সাপেক্ষ। মতিন গাজির দৃশ্যপটগুলো একটু অন্যরকম ভালো লাগার। সবমিলিয়ে আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। অনেক শুভ কামনা, ভোট ও শুভেচ্ছা রইল।।
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত বর্ণনা , সময়কাল , চরিত্র , ভাবনা - সবমিলিয়ে ভাল লেগেছে । গ-ক তে আর ভাল ভাল লেখা লিখুন । শুভকামনা রইল ।
রণতূর্য ২ ভালো লেগেছে।ভোট রইল। আমি একটি কবিতা লেখার চেস্টা করেছি।সময় পেলে পড়বেন এবং সুচিন্তিত মতামত দেবেন আশা করি। :)
রঙ পেন্সিল আপনার লেখার হাত মারাত্মক। খুব ভাল লাগলো। শুভকামনা রইলো গল্পকারের জন্য।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

আমার গল্পটি এক বয়স্ক বৃদ্ধকে নিয়ে,যিনি তার জীবনের শেষ সময়ে এসে বাংগালীর জাতীয় সৃতিসৌধতে ফুল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানানোর ইচ্ছা পোষন করেন।কিন্তু ঢাকায় এসে তিনি মুখোমুখি হন বিভিন্ন পরিস্থিতির যা একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার অন্তর চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়,তিনি তার মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিতে লজ্জা পান। আমরা বাংগালীরা যে আমাদের স্বাধীনতার মূল্য হারাতে বসেছি,তার প্রমাণ এই গল্প।স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করেই তাই এসব ফুটে উঠেছে।

২০ ফেব্রুয়ারী - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "নগ্নতা”
কবিতার বিষয় "নগ্নতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ মে,২০২৪